ফরিদপুর প্রতিনিধি:
সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও বেতন ভাতার নিশ্চয়তা করতে ন্যূনতম বেতন কাঠামোর বিষয়ে সুপারিশ করা হবে জানিয়েছেন গণমাধ্যম কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। তিনি বলেছেন, বস্তুনিষ্ট, শক্তিশালী এবং স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় সংস্কারের মাধ্যমে কি কি পরিবর্তন করা দরকার সেসব বিষয়ে সুপারিশ করা হবে। কারন, সাংবাদিকদের যদি বেতন ভাতার নিশ্চয়তা না থাকে তাহলে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না, সাহসের সাথে কাজ করতেও পারবে না। এছাড়া সাংবাদিকদের নিরাপত্তার স্বার্থ গুরুত্বের সাথে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ৬ জেলার সাংবাদিকদের সাথে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, উপ-সচিব কাজী জিয়াউল বাসেত, সদস্য আখতার হোসেন খান, বেগম কামরুন্নেসা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
কমিশন প্রধান ওয়েজবোর্ডের বিষয় তুলে ধরে বলেন, সংবাদ মাধ্যমের ওয়েজ বোর্ড নিয়ে বিতর্ক অনেক দিনের। তবে এটা আমাদের সংস্কার কমিশনের বিষয় না, আমাদের বলা হয়নি যে ওয়েজ বোর্ড নির্ধারন করে দেন। ওয়েজ বোর্ড গঠন টেকনিক্যাল। কারন, সংবাদ মাধ্যমগুলোতে অনেকগুলো পদবিন্যাস আছে। পদবিন্যাসে কার কি ধরনের কাজ, কি ধরনের চুক্তি, কি ধরনের বেতন ভাতা আলাদা বিচার্য্য বিষয়, আলাদা মান রয়েছে। সেগুলো নির্ধারন করবেন এ পেশার সংশ্লিষ্টরা। এটা জটিল কাজ, এ কারনে আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওয়েজ বোর্ডের সুফল সবাই পাচ্ছে না সেটা আমরা নিশ্চিত করে দেখেছি। ওয়েজবোর্ড সংবাদ পত্রের জন্য, টেলিভিশনের ওয়েজ বোর্ড নেই। টেলিভিশনের এক একটা কোম্পানি এক এক রকমভাবে চুক্তি করে নিয়োগ দেন। কখনও কখনও তারা নিয়োগপত্র ছাড়াই কাজ করে। এভাবেই চলছে টেলিভিশন। অনলাইন পোর্টাল অজস্র, সেখানেও একই ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং এক ধরনের নিয়মহীনতা নিয়মে পরিণত হয়েছে।
আপনারা যদি দেখেন বেসরকারি বেতার, বেসকারি সংবাদ সংস্থা সেখানেও ওয়েজ বোর্ডের খুব একটা বাস্তবতা নেই বা অনুসরণ করা হয় না। সেকারনে যে অবস্থা আমরা দেখেছি যে, সংবাদ মাধ্যমে একটা ন্যূনতম বেতন কাঠামো থাকুক, সে ব্যবস্থাটা করা হবে।
তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে স্থানীয় পর্যায়ে সাংবাদিকদের বেতন ও ভাতার বড় ধরনের বৈষম্য রয়েছে। এটা সত্য কথা যে এই বৈষম্য রয়েছে। এই বৈষম্যের কারনে সাংবাদিকদের দ্বৈনদশার মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এ অবস্থা বিবেচনা করে, ন্যূনতম একটি বেতন কাঠামোর প্রশ্ন আছে। আমরা সে কথটা বলব। এছাড়া ন্যূনতম বেতম কাঠামো কত হওয়া উচিৎ এবং ঢাকার সাংবাদিকদের জন্য আলাদা আর্থিক ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়ে আমরা সুপারিশ করব।
বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান তখনই বেতন কাঠামো দিতে পারবে যখন সে একটি ব্যবসায়ী অবস্থানে যেতে পারবে। আমরা দেখেছি যে, সারাদেশে ৬০০ পত্রিকা বিজ্ঞাপণ পাওয়ার যোগ্য রয়েছে এবং ঢাকায় আড়াই শতাধিক পত্রিকা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে হকার সংস্থাদের রিপোর্টে দেখা গেছে, তাঁদের কাছে মাত্র ৫৮টি পত্রিকার তালিকা রয়েছে। বাকি পত্রিকাগুলোর মার্কেট ভ্যালু নেই। এক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রেসের মালিক, কর্মচারী ও মিডিয়ার মালিক, সম্পাদক জোগসাজসে অনেক পত্রিকা তাদের সার্কুলেশন বাড়িয়ে দেখান বিজ্ঞাপনের রেট বৃদ্ধির জন্য, যেটি রীতিমতো দুর্নীতি। বহুল প্রচারিত পত্রিকাকে সরকারি বিজ্ঞাপন না দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার সার্কুলেশন বেশি দেখিয়ে প্রকৃত সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত করা হয়। এর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে।
এছাড়া কমিশনের সদস্যরা সাংবাদিকদের হয়রানি ও নির্যাতন প্রতিরোধে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করা হবে বলে জানান। ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দিনব্যাপী এ কর্মশালায় ফরিদপুর, রাজবাড়ি, শরিয়তপুর, মাদারিপুর, গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার ৬০ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিল। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা বিভিন্ন সুপারিশও তুলে ধরেন এবং প্রতিটি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে হবে বলে কমিশন প্রধান জানিয়েছেন।