ঢাবি প্রতিনিধি:
আজ
৩ আগস্ট ২০২৫, রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট
ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: আন্তঃহল মুক্ত গদ্য রচনা
প্রতিযোগিতা’-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। প্রতিযোগিতায় হলভিত্তিক মোট ৩৭
জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। পরে সেখান থেকে ছাত্র ও ছাত্রী দুই
ক্যাটাগরিতে মোট ৬জন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী
সকলকে সনদ দেয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ
আহমদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ
ফায়েজ। স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর
(প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ডিনবৃন্দ,
হল প্রভোস্ট/ওয়ার্ডেনবৃন্দ, প্রক্টর, জুরি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ
ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার। সঞ্চালনা করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। অনুষ্ঠানে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের জন্য দোয়া
পরিচালনা করেন আরবী বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম।
রচনা প্রতিযোগিতায় ছাত্রী ক্যাটাগরিতে যারা বিজয়ী হয়েছেন-
প্রথম হয়েছেন সংস্কৃত বিভাগের ২য় বর্ষের সোনিয়া পারভীন। তিনি শামসুন নাহার হলের শিক্ষার্থী।
দ্বিতীয় হয়েছেন ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের অঙ্গনা রাণী পাল ঊর্মি। তিনি শামসুন নাহার হলের শিক্ষার্থী।
তৃতীয় হয়েছেন উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের আয়েশা আখতার। তিনি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থী।
ছাত্র ক্যাটাগরিতে যারা বিজয়ী হয়েছেন-
প্রথম হয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের মাহমুদ-উল-হক। তিনি বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী।
দ্বিতীয় হয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের মো. মাহমুদুল হাসান মাসুম। তিনি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী।
তৃতীয় হয়েছেন সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মো. ছালেহা আহমেদ নাসিম। তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী।
বিজয়ীদের
সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট ও আর্থিক পুরস্কার দেয়া হয়। প্রথম পুরস্কার বিজয়ীকে
১০ হাজার, দ্বিতীয় জনকে ৭ হাজার এবং তৃতীয়জনকে ৫ হাজার টাকা আর্থিক
পুরস্কার দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়
মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম. এ. ফায়েজ বলেন, গত
বছর এই সময়টায় একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে। আর সেই পরিবর্তনের পেছনে
রয়েছে আমাদের শিক্ষার্থীদের অসাধারণ আত্মত্যাগ। কতটা ত্যাগ তারা স্বীকার
করেছে, তা ভাবলেও হৃদয় ভারী হয়ে আসে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন,
এই গণ-অভ্যুত্থানের ফলে আমরা একটি নতুন সুযোগ পেয়েছি। এখন শিক্ষার্থীরা
মেধার ভিত্তিতে হলের সিট পাচ্ছেন। পড়াশোনার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি
হয়েছে। কেউ আর জোর করে কাউকে মিছিলে নিয়ে যাচ্ছে না। এটা একটা বড়
পরিবর্তন।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের প্রতি
আমাদের প্রত্যাশা অনেক। তারা মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একটি সরকার বদলে দিতে
পেরেছে। এটি বিরল ইতিহাস। আমি বিশ্বাস করি, তারাই একদিন এই দেশকে একটি
ভালো জায়গায় পৌঁছে দেবে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, জুলাই এক অর্থে আমাদের ঋণ
স্বীকারের উপলক্ষ্য। ঐতিহাসিক এই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতির সামনে একটি
গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যার যার অবস্থান থেকে
দায়িত্বশীলভাবে কাজ করলে এই রক্তের ঋণ অন্তত কিছুটা হলেও শোধ করা সম্ভব।
জুলাইকে
একাডেমিকভাবে তুলে ধরার প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ
খান বলেন, আমরা জুলাই বিষয়ে গবেষণা ও চর্চাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার
চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
স্বাগত
বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) ও আন্তঃহল
মুক্ত গদ্য রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা
বলেন, আজকের আয়োজনটি আমাদের কেন্দ্রীয় আয়োজনগুলোর একটি ধারাবাহিক অংশ।
জুলাই মাসকে কেন্দ্র করে যেসব অভিজ্ঞতা, মতামত ও ভবিষ্যতের জন্য
দিকনির্দেশনা উঠে এসেছে-এই রচনাগুলোর মাধ্যমে আমরা সেগুলোর একটি সংকলন পেতে
চেয়েছি। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে রচনাগুলো বাছাই করে আনা
হয়। এরপর একটি কেন্দ্রীয় জুরি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে স্বচ্ছ মূল্যায়ন
প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় জুরি বোর্ডের
সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন)
অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ
ছিদ্দিকুর রহমান খান, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মুনিরা
বেগম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তারিক মনজুর, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার
ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তাক গাউসুল হক, গণযোগাযোগ ও
সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের
সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসরাফিল প্রাং ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।