info@desherkhabor24.com

+8801821554477

ফরিদপুরের কালোসোনা খ্যাত পেঁয়াজবীজ দেশের ২০ জেলার বীজের চাহিদা মেটাচ্ছে

image for ফরিদপুরের কালোসোনা খ্যাত পেঁয়াজবীজ দেশের ২০ জেলার বীজের চাহিদা মেটাচ্ছে

মাহবুব পিয়াল,  ফরিদপুর:
দিগন্ত জোড়া মাঠে চাষ হয়েছে ফরিদপুরের কালোসোনা খ্যাত পেঁয়াজবীজের। এবারের উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষক ভিষন খুশি। ফরিদপুর জেলা পেঁয়াজবীজ উৎপাদনে দেশের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এ জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজবীজ দেশের ২০ জেলার বীজের চাহিদা মেটাচ্ছে। ফরিদপুরে মাঠের পর মাঠে আবাদ হয়েছে পেঁয়াজবীজের। পেঁয়াজ চাষে দেশের মোট বীজ চাহিদার ৫০ শতাংশ উৎপাদিত হয় ফরিদপুরে।


একটা সময় পুরোপুরি আমদানি নির্ভর থাকলেও এখন দেশেই পেঁয়াজ বীজের আবাদ বাড়ায় আমদানির পরিমান কমে এসেছে। আমাদের দেশে পেঁয়াজবীজ চাষ আরো বাড়ালে এই বীজ আনদানি করার প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিস। তারা জানিয়েছেন সদর উপজেলায় এ বছর ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে পেঁয়াজ বীজ। এর থেকে ২৬২ মেট্রিকটন পেঁয়াজ বীজ পাওয়ার যাবে।


পেঁয়াজের সাদা কদম শুকিয়ে বের হয় কালো দানা বা বীজ, যার বাজার দর সোনার মত। তাই একে বলা হয় “কালো সোনা”। ‘কালো সোনা’নামে খ্যাত পেঁয়াজের বীজে চাষিদের মুখে এ বছর আনন্দের হাসি বিরাজ করছে। পেঁয়াজবীজ আবাদে ছোট্ট শিশু প্রতিপালনের মতোই যত্নশীল থাকতে হয়। কোনো রকম অযত্ন হলে ফলন নষ্ট হয়ে যায়। অগ্রহায়ণ মাসে পেঁয়াজবীজের চাষ শুরু হয়। ফুল পাকে চৈত্র মাসে। কিছুদিন পরেই পাকতে শুরু করবে এ ফুলের বীজ।


মোট ৯ উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর জেলা। সব উপজেলায় কমবেশি পেঁয়াজবীজ উৎপাদন হয়। তবে সদরের অম্বিকাপুর ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নেই জেলার ৫০ শতাংশ বীজ উৎপাদন হয়।এ ছাড়াও ফরিদপুরের সদরপুর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সালথা ও সদর উপজেলা পেঁয়াজেরবীজ চাষাবাদের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। জেলা কৃষি অফিসের সুত্রমতে ১৮ হাজার ৫৪ হেক্টর জমিতে এ বছর পেঁয়াজবীজ আবাদ হয়েছে। এর থেকে ৯৬৪ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কৃষি অফিস। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজবীজের বাম্পার ফলন হবে এমনটাই আশা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন চাষিরা।


এখন চাষিরা ব্যাস্ত ফুলের পরাগায়নে। চাষী জামাল তাললুকদার। ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক তিনি। প্রায় ২০ বছরযাবৎ এ কালো সোনা চাষ করেন তিনি। তারবাবা ও চাচারাও এ অঞ্চলে পেঁয়াজবীজ চাষকরতেন। দুর্দান্ত ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, পেঁয়াজবীজ খেতে বিষ প্রয়োগ করায় মৌমাছি পরাগায়নের জন্য আসে না। এতে করে ফুলের পরাগায়ন হয় না। ফলে বিগত বছর গুলোতে তেমন ফলন হয়নি। ক্ষতি হয়েছে আমাদের। তিনি বলেন, গত বছর থেকে আমরা হাত দিয়েই ফুলের পরাগায়ন করে থাকি।কৃষক হাতের তালু বুলিয়ে এক ফুলের রেণুর সঙ্গে আরেক ফুলের রেণুর পরাগায়ন করে থাকে। এতে করে ফলন ভালো হয়। যদিও এতে কৃষক মাঠে ব্যবহার করতে অতিরিক্ত খরচ হয়। তবুও আমাদের লাভ হয় কারন এতে ফলন ভালো হয়। তিনি বলেন, এ বছর ফলন অত্যান্ত দারুণ হয়েছে। এবারের আবহাওয়া পেঁয়াজ ফুলের জন্য খুব কার্যকরী। এবারের ফুলের কদমও বড় হয়েছে।


জামাল তালুকদার এ বছর ৬ একর জমিতে পেঁয়াজবীজ আবাদ করেছেন। একর প্রতি আবাদে ১ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে তার। এখন কৃষক দিয়ে পরাগায়নে আরো প্রায় ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। এই পরাগায়ন এক সময় প্রকৃতি নির্ভর ছিলো। অনেকেই খেতে বিষ প্রয়োগ করে। যার ফলে মৌমাছি বা অন্য কোন পোকা এখন আর পেয়াজ খেতে আসেনা মধু সংগ্রহে।


এ ইউনিয়নে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত চাষী শাহিদা বেগম, জাহাঙ্গীর হোসেন, ইনতাজ মোল্লা, বাবু মোল্যা, শেখ সেলিম, শেখ হাবিবুর রহমান, শরিফুল ইসলামসহ প্রায় ৫০ জন কৃষক চাষ করছেন এই কালো সোনা।


দেশসেরা পেঁয়াজবীজ চাষী ও নারী কৃষক ফরিদপুরের সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের শাহিদা বেগম। তিনি প্রায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে পেঁয়াজবীজ চাষ করছেন। তিনি নানা পদকে ভূষিত হয়েছেন। পেঁয়াজবীজ চাষে অনন্য উদাহরণ স্থাপন করা শাহিদা বেগমের পেঁয়াজবীজের নাম ‘খানবীজ’। তিনি সেরা নারী কৃষক হিসেবে পেয়েছেন ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড চ্যানেল আই এগ্রো অ্যাওয়ার্ড’। এছাড়াও তিনি ফরিদপুর কৃষিসম্প্রসারণ বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।


শাহিদা বেগম বলেন, দেশের মোট চাহিদার পেঁয়াজবীজের ৪ ভাগের এক ভাগবীজ আমার জমি থেকে উৎপাদিত হয়। মৌমাছির না থাকায় পরাগায়নে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে আমাদের। তিনি বলেন এ বছর পেঁয়াজবীজ ভালো হয়েছে।


স্থানীয় কৃষক সামাদ তালুকদারের ভাষ্য, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজবীজ আমদানি করা হলে তাসার্বিক ভাবে ক্ষতিই ডেকে আনবে। কারণ, ভারত থেকে আনাবীজ নিম্নমানের হয়, তাতে ভালো ফলন হয়না।’
ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ফরিদপুর বীজ উৎপাদনে শর্ষি অবস্থানে রয়েছে। এ জেলার বীজ দিয়ে দেশের ২০ জেলার বীজের চাহিদা মেটানো হয়। আগামীতে এ বীজের চাষাবাদ আরো বাড়াতে পারলে বিদেশ থেকে আর বীজ আমদানী করা লাগবে না। আমরা এ লক্ষেই আগাচ্ছি। সেই সাথে কৃষকে আমরা সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবীদ মোঃ শাহাদুজ্জামান বলেন, জেলায় এ বছর ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টরজমিতে পেঁয়াজবীজ আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩৪ হেক্টর জমিবে বেশি আবাদ হয়েছে। কৃষদের আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। অতিরিক্ত কিটনাশক ব্যবহারে মৌমাছি না আসায় ফুলের পরাগায়নে সমস্যা হচ্ছে। আমরা সে বিষয়েও কৃষককে পরামর্শ প্রদান করছি। কৃষক হাত দিয়ে ফুলের পরাগায়নের ব্যবস্থা করছে। এতে করে ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে সাথে কৃষকের কিছুটা খরচ বেশি হচ্ছে। আমরা দেশে পেয়াজবীজ আবাদ আরো বাড়াতে কাজ করছি।