মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুরে শওকত মোল্যা (২০) নামে এক চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাঁচ জনকে মৃত্যুদন্ড ও একজনকে ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। এ ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে ফরিদপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক মাকসুদুর রহমান এ রায়ের আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি চৌধুরী জাহিদ হাসান খোকন।
রায় ঘোষনার সময় আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী মেহেদী আবু কাওসার (২৬), জনি মোল্যা (৩১), রাজেস রবি দাস (৩০) ও রবিন মোল্যা (২৬) উপস্থিত থাকায় তাদের পুলিশ পাহারায় কারাগারে পাঠানো হয়। এ মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামী রাসেল শেখ (২৬) পলাতক রয়েছে।
আদালত থেকে কারাগারে আসামীদের নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সাথে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করলে এক পর্যায়ে মারমুখি অবস্থা নেন কয়েকজন আসামী। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা সকলেই জেলা শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার বাসিন্দা ও ভাড়াটিয়া।
এ মামলায় ১০ বছরের কারাদন্ডসহ ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ১০ মাসের কারাদন্ড দেওয়া অপর আসামী বাদশা শেখ (২৬) রাজবাড়ী জেলা সদরের মজলিসপুর এলাকার মুরাদ শেখের ছেলে। তিনি ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকটি ক্রয় করেছিলেন বলে জানা গেছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক নিয়ে ফরিদপুর শহরে বের হন সালথা উপজেলার দেয়ালীকান্দা গ্রামের ও শহরের পশ্চিম খাবাসপুরের ভাড়াটিয়া শওকত মোল্যা। ওইদিন রাতে তিনি বাড়িতে না ফেরায় স্বজনরা খুঁজতে থাকেন। পরেরদিন সকালে শহরের গোয়ালচামট মোল্যাবাড়ি সড়কের শেষপ্রান্তে একটি ধানক্ষেতে শওকতের মরদেহ শনাক্ত করেন তার স্বজনরা। এ ঘটনার পরেরদিন অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে কোতয়ালী থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা আয়নাল মোল্যা।
মামলা দায়েরের তিনদিনের মাথায় রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। এরপর পাঁচজন আসামীকে গ্রেপ্তার করেন এবং ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম । রায় ঘোষণা পর আসামীর স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পুরো আদালত চত্ত্বরে তাঁদের আর্তনাদে ভাড়ি হয়ে উঠে পরিবেশ।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি চৌধুরী জাহিদ হাসান খোকন জানান, আসামীরা ইজিবাইকটি ভাড়া করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। এক পর্যায়ে কৌশলে ঘটনাস্থলে নিয়ে গলায় বেল্ট পেঁচিয়ে চালককে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। আদালতে তাঁরা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন এবং হত্যাকান্ডটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক এই রায় ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট কর্তৃক মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আসামীদের গলায় ফাঁসি ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট প্রকাশ করছি।