বাগেরহাট প্রতিবেদকঃ
বাগেরহাটের
ঐতিহ্যবাহী খানজাহান আলীর (রহ.) মাজারে তিন দিনব্যাপী বাৎস্যরিক মেলা শুরু
হয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথি অনুযায়ী
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ফজরের নামাজের পর থেকে মেলা শুরু হয়েছে। সকাল থেকে
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ মাজারে জড়ো হয়েছেন।
বিকেলে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় দেখা গেছে মাজার ও আশপাশ এলাকায়। এসব
ভক্তরা তিন দিন মাজার এলাকায় অবস্থান করবেন।
নিজের
মনোবাসনা পূরণের আশায় স্রষ্টার আরাধনায় মগ্ন থাকবেন তারা। এই তিন দিন
বাদ্যযন্ত্র নিয়ে লালন, মুর্শিদী, ভাটিয়ালী ও বিভিন্ন আধ্যাত্মিক গান
পরিবেশন করবেন ভক্তরা। রাতভর লোকে-লোকারন্য থাকবে মাজার প্রাঙ্গণ। এছাড়া
সারাদিন হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থী রোগ ও পাপ মুক্তির আশায় মাজার
সংলগ্ন দীঘিতে গোসল করে থাকেন। আগত ভক্তদের বিশ্বাস এখানে এসে দোয়া করলে যে
কোনো সমস্যার সমাধান মেলে।
প্রায়
সাড়ে ৬শ’ বছর ধরে খানজাহানের (রহ.) মাজারে এই মেলা চলে আসছে। এবার মেলায়
বিশৃঙ্খলা এড়াতে জেলা পুলিশ, টুরিষ্ট পুলিশ, আনসার, গ্রামপুলিশ ও স্থানীয়
ফকিরদের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করছেন।
মেলা
উপলক্ষে ৫শতাধিক মৌসুমি ব্যবসায়ী বিভিন্ন ধরণের পন্যের পশরা সাজিয়ে
বসেছেন। মেলায় আগত ভক্ত দর্শনার্থীরা ধর্মীয় প্রার্থণার পাশাপাশি কেনাকাটাও
করছেন। এ দোকান থেকে ওদোকন ঘুরে নিজেদের পছন্দের পন্য খুজছেন।
পিরোজপুর
জেলার ভান্ডারিয়া থেকে আসা হামিদ খান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, অনেকদিন
ধরে মাজার মেলা আসি। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সাথে দেখা হয়।
খুবই ভাল লাগে, এখানে যে দীঘি রয়েছে, সেখানে গোসল করলে আমাদের শান্তি লাগে।
মাজার
মেলায় আসা বরিশাল এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, খানজাহানের মেলা উপলক্ষে
আমরা পরিবারসহ এসেছি। পরিবারের সকলকে নিয়ে এখানে স্বাচ্ছন্দে ঘুরতে পারছি
তাই ভালো লাগছে। তিনদিন আমরা এখানে থাকব। আমাদের মানতও ছিল, তা পরিশোধ
করেছি।
মরিয়ম নামের এক
নারী বলেন, ভোরে আসছি। রবিবার রাতে যাব। এখানে মাজার ভাই-বোনদের সাথে গান
করব, সবাই মিলে প্রার্থণা করব। আশাকরি মনের চাওয়া পূরণ হবে।
খুলনার
তেরোখাদা থেকে আসা মাহমুদ শেখ বলেন, ঐতিহ্যবাহী খান জাহানের মেলা দেখার
জন্য প্রতি বছর আমি এ মেলাতে আসি। দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের কাছে এ মেলা খুবই
জনপ্রিয়। গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য মেলাটি হয়নি তাই এ বছর মেলা
অনুষ্ঠিত হওয়ায় বেশ ভালো লাগছে।
স্থানীয়
মুন্না শেখ বলেন, আমাদের বাড়ির কাছে প্রতি বছর এ মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন
এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। এ বছর মেলা শুরু হওয়ার একদিন আগে থেকেই
দর্শণার্থীরা আসা শুরু করেছে। আজ মেলার প্রথম দিন হাজারো মানুষের আগমন
ঘটেছে এ মেলায়।
রবিবার (১৩
এপ্রিল) সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই মেলা শেষ হলেও, অনানুষ্ঠানিকভাবে মেলা
থাকবে আরও এক সপ্তাহ পর্যন্ত। এই সময়ে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা যেমন আসবেন।
ব্যবসায়ীরা তাদের পন্য বিক্রয় করবেন।
মাজারের
অন্যতম খাদেম ও ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফকির তারিকুল
ইসলাম বলেন চৌদ্দশ খ্রিষ্টাব্দে হযরত খানজাহান (রহ.) পুণ্যভূমি বাগেরহাটে
আসেন। পাঁচশ বছর আগে থেকেই চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দেশবিদেশের হাজার
হাজার ভক্ত আশেকানদের মাজারে সমাগম ঘটে। সেই থেকে ধারাবাহিকভাবে এটি চলে
আসছে। তারা এখানে এসে মাজার জিয়ারত ও দীঘিতে গোসল করেন। তারা মনোবাসনা
পূর্ণের জন্য আল্লার দরবারে কান্নাকাটি করেন। ভক্তরা এখানে জড়ো হয়ে তাদের
মনোবাসনা পূরণের আশায় মিলিত হন। এখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। দক্ষিণাঞ্চলের
একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। মেলায় যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না ঘটে সেজন্য প্রশাসন
ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।