info@desherkhabor24.com

+8801821554477

ফরিদপুরে স্বামী শাশুড়ীর যৌতুকের দাবীতে নির্যাতনে মৃত্যুর পথযাত্রী গৃহবধু

image for ফরিদপুরে স্বামী শাশুড়ীর যৌতুকের দাবীতে নির্যাতনে মৃত্যুর পথযাত্রী গৃহবধু

মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর:
ফরিদপুরের সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি গ্রামের গৃহবধু কাকলী বেগম তার স্বামী এবং পরিবারের লোকজনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে বিষপানে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।  দুই সন্তানের জননী কাকলী বেগম বর্তমানে গুরুত্বর অসুস্থাবস্থায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রতিনিয়ত তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে বলে জানিয়েছে পরিবার।

ওই গৃহবধুর পিতা একই উপজেলার বসুনরসিংহদিয়া গ্রামের মো. আক্কাস আলী পাটোয়ারী ও অন্যান্যরা জানান, ১৫-১৬ বছর আগে মল্লিকপুর বিন্নাকান্দি গ্রামের তোতা শেখের পুত্র এরশাদ শেখের সাথে কাকলীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই প্রায়শ যৌতুকের দাবীতে মারধর করতো। মেয়ের সুখের কথা বিবেচনায় এক পর্যায়ে কয়েক বছর আগে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে এরশাদকে দুবাইতে পাঠানো হয়। তিনি জানান, স্বামী প্রবাসে থাকা কালে শাশুরী জমেলা খাতুন ও শশুর তোতা শেখ প্রায়শ ছেলের বউ কাকলী বেগমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। তাদের নির্যাতনে কয়েক বার বাড়ী ছেড়ে বাবার বাড়ীতে চলে আসে কাকলী। যদিও পারিবারিক শালিশের মাধ্যমে আবার শশুর বাড়ীতে পাঠানো হয়। 


তিনি দাবী করেন, এবছরের ২৫ এপ্রিল কাকলীর স্বামী প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসে। কিছু দিনের মধ্যে ফের প্রবাসে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে নতুন করে পাঁচ লাখ টাকা দাবী করে। এসময় অন্য দেশে যেতে বেশী টাকা লাগার অজুহাতে ওই টাকা দাবী করা হয়। এ টাকা দিতে অস্বিকৃতি জানালে ফের স্বামী, শাশুড়ী ও শশুর মিলে ঘরের মধ্যে চারদিন ধরে আটকে রেখে কাকলীর ওপর নির্যাতন চালায়, এতে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঘরে রক্ষিত ঘাস মারার ঔষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় সে। 


কাকলীর পিতা জানান, ঘাস মারার ঔষধ সেবনের কয়েক ঘন্টা পরে হাসপাতালে নেয়া হলে অন্যদের মাধ্যমে, জেনে আমরা (কাকলীর পিতার পরিবার) হাসপাতালে যাওয়ার পর ঘটনা জানতে পারি। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাতদিন চিকিৎসা দেয়ার পর অবস্থার আরো অবনতি হলে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয় কাকলীকে। তারা দাবী করেন, কাকলীর স্বামীর বাড়ীর লোকজন কেউই ওই গৃহবধুর কোনো ধরনের খোঁজ খবর রাখছে না। বরং কাকলীর স্বামী এ ঘটনার পর থেকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। 


এদিকে ০৫ অক্টোবর রোববার কাকলীর স্বামীর বাড়ী বিন্নাকান্দি গ্রামে গিয়ে স্বামী, শাশুড়ী ও শশুরকে পাওয়া যায়নি। তবে ওই বাড়ীতে অবস্থান করা এরশাদের বোন আন্না আক্তার জানান, হাসপাতালে গেলে তার ভাইসহ পরিবারের লোকজনের সাথে খারাপ আচরণ করায় কেউ সেখানে যায়নি। তবে এরশাদ, ও তার বাবা-মা কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি সে।


এদিকে এ ঘটনায় কাকলীর পিতা মো. আক্কাস আলী পাটোয়ারী বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন কাকলীর স্বামী ও শশুর শাশুড়ীর বিরুদ্ধে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ (সংশোধন ২০০৩) এর ১১ (গ) ধারায় নথিভুক্ত করা হয়, যার নং ৫৭। 


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম জানান, অভিযোগের তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।