মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুর পৌর সুপার মার্কেটের নবনির্মিত ভবনের দোকান বরাদ্দে পুরাতন ভাড়াটিয়াদেরও নতুনদের মতোই সেলামি প্রদানের ঘোষণায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই মার্কেটের ওষুধ ব্যবসায়ীরা। এই সিদ্ধান্ত তাদের সাথে সম্পাদিত পৌর কর্তৃপক্ষের চুক্তি অনুযায়ী হয়নি উল্লেখ করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা। দাবি বাস্তবায়নের জন্য তারা ফরিদপুর পৌরসভার সামনে মানববন্ধন করে মিছিল সহকারে যেয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
পৌর সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান চৌধুরী জানান, গত ৩ অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পৌর সুপার মার্কেটের নবনির্মিত ভবনের বিভিন্ন কক্ষ লটারীর মাধ্যমে বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে নিচতলায় সেলামি ১৫ লাখ টাকা এবং দোতলায় সেলামি ১৪ লাখ টাকা ধার্য্য করে ৭৫ পার্সেন্ট টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা প্রদানের জন্য আগ্রহীদের বলা হয়।
২০১৭ সালে "তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ (সেক্টর) প্রকল্পের" অর্থায়নে পুরাতন সুপার মার্কেট বিল্ডিং ভেঙ্গে নতুন করে পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। কামরুল হাসান চৌধুরী জানান, ওই সময়ে পুরাতন ব্যবসায়ীদের দোকান সরিয়ে নেয়ার আগে ওই বছরেই তৎকালীন পৌর মেয়রের সাথে সুপার মার্কেটের মালিক সমিতির একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তিতে মার্কেটের পুরাতন ভাড়াটিয়াদের ক্ষেত্রে ২৫ পার্সেন্ট সেলামি প্রদান করে স্ব-স্ব দোকান কক্ষ বরাদ্দের দেয়ার কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু নতুন করে বিজ্ঞপ্তিতে পুরাতন ভাড়াটিয়াগণের ক্ষেত্রেও একই শর্তে আবেদন পত্র দাখিল করার কথা বলা হয়েছে।
সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সদস্য ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর সৈয়দ আলাওল হোসেন তনু বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ১২ তলা ভবন নির্মাণের স্থলে ৩ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পুরান মার্কেটের ভিতরে সিড়ি কোঠার দোকান ও মার্কেটের বাইরে ৮/১০টি দোকান বাদে সকল কক্ষের আয়তন ছিল ১৮০ বর্গফুট। বর্তমানে যার আয়তন মাত্র ৮০ বর্গফুট করা হয়েছে। যা ওষুধ বিক্রয় নীতিমালার পরিপন্থী।
জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মঞ্জুরিকৃত ঢাকা বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুর সুপার মার্কেট নির্মাণ করা হয়। পরে ঢাকা বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প বিলুপ্ত হলে এটি ফরিদপুর পৌরসভার আওতায় নেওয়া হয়। পুরান সুপার মার্কেটের অধিকাংশই ওষুধের ব্যবসা ছিলো। এর বাইরে বেশ কয়েকটি ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বার এবং প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরী ছিল। তারা একাধিক কক্ষ নিয়ে এসব ব্যবসা পরিচালনা করতেন। এসব দোকান মালিকেরা জানান, গত ৭ বছরেও দোকান বুঝে না পেয়ে ব্যবসায়ীকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন। অনেকে লোকসান দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। অনেকে সংসার পরিচালনা ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগানোর জন্য তাদের জায়গাজমি বিক্রি করে দিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের পাশে তাদের জন্য যেই জায়গা অস্থায়ী দোকান ঘর তোলার জন্য দেয়া হয় সেখানে মাত্র ১০ থেকে ১২ টি দোকান করতে পেরেছেন। অনেকেই বাইরে উচ্চ মূল্যে ভাড়া নিয়ে লাইসেন্স টিকিয়ে রেখেছেন। তাদের একমাত্র আশা ছিলো পুনরায় তারা সুপার মার্কেটে ব্যবসা করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু নতুন এই বিজ্ঞপ্তির পর তারা এখন দিশেহারা। এখন তাদের পুরনো দোকানগুলোকে তারা ফিরতে না পারলে অনেককে ব্যবসা গুটিয়ে পথে বসতে হবে। তারা এর প্রতিকার দাবি করেন।