মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর:
গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষনে ও বেকু দিয়ে মাটি কাটার ফলে ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা লেক পাড়ের পূর্বপাশের জনচলাচলের সড়কটি ধসে যাচ্ছে। যেকোন সময় পুরো সড়কটি লেকের মাঝে বিলীন হয়ে যাওয়ার তীব্র আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে আশেপাশের বেশ কয়েকটি বাসাবাড়ি ও প্রাচীণ গাছপালা ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সম্প্রতি সরকার টেপাখোলা লেক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরে লেকের ওই অংশের রাস্তার মাটি বেকু দিয়ে রাস্তার পাশে থেকে একেবারে নিচে দীর্ঘ খাদ করে তুলে নেয়া হয় । এরপর গত কয়েকদিনের তীব্র বর্ষণের ফলে রাস্তার নিচের মাটি সরে বিরাট অংশ জুড়ে দেবে যায়। এতে যেকোন সময় সড়কটি দেবে যেয়ে লেকের কিনারায় পড়ে যেতে পারে।
এর ফলে ওই এলাকার জনসাধারণের জনচলাচলে প্রচন্ড বিঘ্ন ঘটছে। রিকশা নিয়েতো দুরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচল করাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ওই রাস্তার অপর পাশেই রয়েছে সীমানা প্রাচীর ঘেরা বাড়ি। ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়া না হলে তাদের বাড়ির সীমানা প্রাচীরও এতে ধসে যেতে পারে বলে বাড়ির বাসিন্দারা আশংকা করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের শহীদ সরোয়ার্দী সরোবর নামে পরিচিত ওই টেপাখোলা লেকের উত্তর-পূর্ব অংশ থেকে কংক্রিটের তৈরি প্রায় ১২ ফুট চওড়া ওই রাস্তাটি অপরপ্রান্তে দক্ষিণ-পূর্ব অংশের বিন্দুপাড়া ও টেপাখোলা মাছ বাজারে যাতায়াতের পথ। এছাড়া বিন্দুপাড়ার পথ দিয়ে সোজা বেরিয়ে যাওয়া যায় তীরবর্তী ভাজনডাঙ্গার দিকেও। এজন্য সড়কটি বহুল ব্যবহৃত। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ওই রাস্তায় চলাচল করে। এছাড়া টেপাখোলা লেকপাড়ে ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীরাও ওই সড়কটি ব্যবহার করে।
সড়কটির পাশেই রয়েছে লেকপাড় মসজিদ। এছাড়া বিন্দুপাড়ায় নির্মিতব্য দু'টি দূর্গা পূজা মন্ডপেও যাতায়াতের রাস্তা এটি। রাস্তাটি পৌরসভার নির্মিত হলেও সম্প্রতি এলজিইডির অর্থায়নে জেলা পরিষদ ১৮০ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত টেপাখোলা লেক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়। ওই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই গত তিনমাস আগে লেকের পানি তুলে ফেলা হয়। এরপর লেকপাড়ের পূর্বপাশের রাস্তার একেবারে সীমানা ঘেষে বেকু মেশিন দিয়ে মাটি তুলে রাস্তার সাথে দীর্ঘ খাদ করে মাটি তুলে নেওয়া। রাস্তা ঘেষে এভাবে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে পার্শ্ববর্তী রাস্তা সংরক্ষণের বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
টেপাখোলা লেকপাড়ের বাসিন্দা নাজমুল হাসান নাসির এই প্রতিবেদককে বলেন, বেকু দিয়ে এভাবে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে তুলে লেকপাড়ের রাস্তার ওই অংশের প্রায় ২০ মিটার জুড়ে রাস্তার নিচের মাটি বৃষ্টিতে নরম হয়ে সরে গেছে। এতে পাকা রাস্তাটির ওই অংশ জুড়ে দেবে গেছে। রাস্তার অপর পাশের একটি ভবনের সীমানা প্রাচীরও যেকোন মুহুর্তে ধসে যেতে পারে। এছাড়া সড়কটির পাশে অবস্থিত অনেকগুলো প্রাচীন গাছ ও অন্যান্য বাসাবাড়িও ধসে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীকে বারবার বললেও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। এতে সড়কটির আরো অনেকস্থানে ধসের সৃষ্টি হতে পারে।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রকৌশলী দেবাশীষ বাগচি বলেন, সরেজমিনে না যেয়ে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছিনা। আগামীকাল সকালের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌছে এব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, টেপাখোলা লেক উন্নয়ন প্রকল্প অনুযায়ী লেকের চারপাশের রাস্তার সংস্কার করে ওয়াকওয়ে তৈরি করা হবে। এজন্য আলাদা কাজ ধরা আছে। তবে সম্প্রতি মিনিস্ট্রিতে কিছুটা ঝামেলা হয়। এজন্য একটু সমস্যা হয়েছিলো। তবে সেটি আবারও শুরু করা হবে।