শাহাদাত হোসেন সোহাগ, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি
শেরপুর
প্রেসক্লাবের নবগঠিত কমিটি ভেঙে দিতে দলীয় প্যাডে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে
জেলা বিএনপি। এতে আগের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করতে চায় বিএনপি। সোমবার
(২৬ আগস্ট) রাতে দলটির প্যাডে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মাহমুদুল হক রুবেল ও
সাধারণ সম্পাদক মো. হযরত আলী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো
হয়।
এদিকে, এখতিয়ার
বহির্ভূতভাবে সাংবাদিকদের পেশাজীবী সংগঠনকে বিলুপ্ত করায় প্রকাশ্যে ঘোষণা
দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এটিকে নজিরবিহীন বলছেন
গণমাধ্যমকর্মী ও সচেতন মহল।
খোঁজ
নিয়ে জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল শেরপুর প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ৫
আগস্ট সরকার পতনের পর গত ২১ আগস্ট আগের কমিটিকে বাদ দিয়ে ২২ সদস্যের নতুন
কমিটি গঠন করা হয়। এতে এনটিভির কাকন রেজাকে সভাপতি, দেশ টিভির রফিক মজিদকে
কার্যকরী সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের মাসুদ হাসান বাদলকে সাধারণ সম্পাদক
করা হয়েছে।
তবে সোমবার
রাতে জেলা বিএনপির প্যাডে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জেলা বিএনপির
সভাপতি মো. মাহমুদুল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক মো. হযরত আলী এই মর্মে অবগত
হয়েছি যে, গত ২১ আগস্ট শেরপুর প্রেসক্লাবের কাকন রেজাকে সভাপতি ও মাসুদ
হাসান বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে ২২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা
বিভিন্ন গণমাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা
বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ আমরা কেউ অবগত নই। তাই উক্ত কমিটি বাতিল ঘোষণা করা
হলো। পরবর্তীতে সব সাংবাদিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি সুন্দর ও শক্তিশালী
কমিটি গঠন করা হবে।’
বিএনপির
এমন প্রেস বিজ্ঞপ্তির পর সাংবাদিক মহলে শুরু হয় সমালোচনা। জেলা বিএনপির
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নবনির্বাচিত সভাপতি কাকন রেজা, কার্যকরী সভাপতি রফিক
মজিদ ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান কমিটি বাতিলের ঘোষণার তীব্র নিন্দা ও
প্রতিবাদ জানান। যৌথ স্বাক্ষরে এক বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন,
প্রেসক্লাব একটি অরাজনৈতিক ও সর্বজনীন পেশাজীবী সংগঠন। সব রাজনৈতিক দলকে
তারা শ্রদ্ধা করেন। প্রেসক্লাব নিয়ে এ ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অনভিপ্রেত।
এটি সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করার শামিল ও গণতন্ত্র চর্চ্চার পরিপন্থি। একই
সঙ্গে জেলা বিএনপির দেওয়া বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের দাবি জানানোর পাশাপাশি
তারা সভাপতি মাহমুদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক হজরত আলীর সংবাদ বয়কটের ঘোষণা
দেন।
এ ব্যাপারে
প্রেসক্লাবের সভাপতি কাকন রেজা ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান বাদল বলেন,
প্রেসক্লাব একটি অরাজনৈতিক ও সার্বজনীন পেশাজীবী সংগঠন। আমরা সব রাজনৈতিক
দলকে শ্রদ্ধা করি। তবে বিএনপির এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ঘটনা
সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে গলা চেপে ধরার শামিল।
প্রেসক্লাবে
নেতাদের বিবৃতি দেওয়ার পর গতকাল রাতেই জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ
সম্পাদক স্বাক্ষরিত আরেকটি বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি বাতিলের ঘোষণা বাদ দিয়ে বিজ্ঞপ্তিটি সংশোধন করা হয়।
এ
বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হযরত আলী বলেন, টাইপিং
ভুলের কারণে কমিটি বাতিল লেখা হয়েছে। আমরা আবার সংশোধন করে প্রেস
বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। নতুন বিজ্ঞপ্তিতে আমরা অবগত নই সে পর্যন্ত থাকবে। ‘কমিটি
বাতিল ঘোষণা করা হলো, পরবর্তীতে সব সাংবাদিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি
সুন্দর ও শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে’-এই অংশ বাদ দিয়েছি আমরা।
জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মাহমুদুল হক বলেন, প্রেসক্লাবের কমিটি সম্পর্কে দেওয়া বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি চূড়ান্ত নয়।
এদিকে,
প্রেসক্লাবের কমিটি বাতিলের বিষয়টি জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপির
মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘আমি প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি
পেয়েছি, এটি খুবই দুঃখজনক। এটা তো করতে পারে না বিএনপি। আমি শেরপুর বিএনপির
নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি।’
তিনি
আরও বলেন, ‘জাতীয় প্রেসক্লাব কিংবা কোনও জেলা প্রেসক্লাব বিএনপির অঙ্গ বা
সহযোগী সংগঠন নয়, এমনকি বিএনপির পেশাজীবী সংগঠনও নয়। এই সংগঠনে হস্তক্ষেপ
করার কোনও সুযোগই নেই বিএনপির।’
এরই
মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এমন কাণ্ডের প্রতিবাদ
জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি, কার্যকরী সভাপতি এবং
সাধারণ সম্পাদক। একইসঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সব
অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।