ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুর শহরের অম্বিকাপুর রেল স্টেশনের নাম না পরিবর্তন করার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেছে ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চত্ত্বরে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের হাতে এ স্মারক লিপি তুলে দেন ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সদস্যরা।
স্মারকলিপিতে বলাহয়, আমরা জানতে পেরেছি আমাদের শতবর্ষী পুরনো ফরিদপুরের অম্বিকাপুর রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করার পায়তারা চলছে।ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ১৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্দোলনের ফসল হিসেবে রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরের গোবিন্দপুর এলাকায় এ রেল স্টেশনটি স্থাপন করা হয় ১৮৯৯ সালে ফরিদপুরের কৃতিসন্তান, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও সমাজসেবী অম্বিকা চরণ মজুমদারের ঐকান্তিক চেষ্টার কারনে। তখন এ রেলস্টেশনের নাম ছিল‘ফরিদপুর স্টেশন’। ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে অম্বিকাচরণ মজুমদারের মৃত্যুর পর এ রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ১৯২৩ সালে‘অম্বিকাপুর রেল স্টেশন’রাখা হয়। এটি করা হয়েছিল অম্বিকা চরণ মজুমদারের স্মৃতি ধরে রাখা ও রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত রেল পথ সম্প্রসারিত কাজে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে। এ কারনে এ স্টেশনের নামকরণের সাথে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য যেমন জড়িত তেমনি ফরিদপুরবাসীর আবেগের বহিঃপ্রকাশও বটে।
স্মারক লিপিতে ফরিদপুরের জন্য অম্বিকাচরণ মজুমদারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের আলোকপাত করে বলা হয়, এই ফরিদপুরের জন্য তাঁর অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি একাধিকবার জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ছিলেন ফরিদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি পৌরভবন, রাস্তাঘাট সেতুনির্মান ও পৌরসভার পানির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন মূলক কাজ করেন। দক্ষিণ বঙ্গের আজকের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদানের কথা সর্বজন বিদিত। ১৮৮১ সালে তিনি‘ফরিদপুর পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’গঠন করেন। এটি ছিল ফরিদপুরের প্রথম কোন রাজনৈতিক সংগঠন। তিনি ১৯১৬ সালে লক্ষৌতে অনুষ্ঠিত সর্ব ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্মারকলিপির দাবির সমর্থনে আরও বলা হয়, আমরা ফরিদপুরের নাগরিক সমাজ মনে করি যে জাতি তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মর্যাদা দিতে জানে না সে জাতি অপাংত্তেয় জাতি হিসেবে পরিগণিত হয়।
এমতাবস্থায় আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য, এমন একজন মহৎব্যাক্তির নামে নামাঙ্কিত অম্বিকাপুর রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করার কোন সুযোগ নেই। ফরিদপুরের নাগরিক সমাজ কোন অবস্থাতেই এ পরিবর্তন মেনে নেবেনা, গ্রহণ করবে না।
২৫ সদস্য বিশিষ্ট ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সকল সদস্য এ স্মারক লিপিতে স্বাক্ষর করেন।
স্মারক লিপি প্রদানের সময় ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বাবর, সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা, সিনিয়র সদস্য অধ্যাপক এম এ সামাদ, অধ্যাপক আলতাফ হোসেন, সৈয়দ জুনায়েদ, আনিসুর রহমান, রফিকুজ্জামান, হাসানউজ্জামান, শেখ মফিজুর রহামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারক লিপি হাতে নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, এ বিষয়টি তিনি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দেবেন।