আবারও ডিম দিয়েছে খানজাহান আলী দীঘির কুমির
বাগেরহাট প্রতিবেদকঃ
বাগেরহাটের
খানজাহান আলী (রহ:) এর মাজার সংলগ্ন দীঘির কুমির 'পিলপিল' ডিম দিয়েছে।
মাজারের ঠিক পূর্ব ঘাটে বিনা ফকিরের বাড়ি সংলগ্ন পাড়ে গর্তের মধ্যে ডিম
দিয়েছে মা কুমিরটি।এবার এই মা কুমিরটি প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি ডিম দিয়েছে।
ডিমগুলো ফোটানোর জন্য ডিমে তা দিচ্ছে মা কুমিরটি।
তবে এই ডিমে বাচ্চা ফোটা
নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। কারণ বিগত বছর কয়েকবার ডিম দিলেও এই
কুমিরের কোনো বাচ্চা ফোটেনি। যার কারণে কুমিরের ডিম দেওয়া নিয়ে ফকিরদের
মাঝে তেমন কোন আগ্রহ নেই। কুমির বিশেষজ্ঞরা বলছেন পুরুষ কুমিরটির বয়স বেশি
হওয়ায় প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
খানজাহান
আলী (রহ) এর মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, ধারণা করছি প্রায়
মাস খানেক আগে কুমিরটি দিঘীর পূর্ব পাড়ের বিনা ফকিরের বাড়ির পাশে ডিম
পেরেছে। কয়েকদিন আগে আমাদের চোখে পড়েছে। এই নিয়ে অনেকবার এই মা কুমিরটি
দিঘীতে ডিম পেড়েছে। কিন্তু কখনও বাচ্চা হয়নি। এভাবে বাচ্চা না হলে কুমিরের
বংশ বৃদ্ধি হবে না। মাজারের দিঘী থেকে মিঠা পানির কুমির হারিয়ে যাবে। যার
ফলে মাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।
বার
বার ডিম দিলেও বাচ্চা না ফোটার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করেছে বাগেরহাট জেলা
প্রাণি সম্পদ বিভাগ ও করমজল বন্য প্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তাগণ।
তাদের দাবি বয়সের কারণে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় মাজারের কুমিরের ডিমে
বাচ্চা ফুটছে না।
সুন্দরবন
পূর্ব বন বিভাগের করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
আজাদ কবির বলেন, বয়সের কারনে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় দিঘীতে থাকা
মিঠাপানির কুমির দুটি বারবার ডিম দিলেও কোন বাচ্চা হচ্ছে। এছাড়া এখানে থাকা
কুমিরদের খাবারের বিষয়ে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। মাজারে আসা ভক্ত ও
দর্শনার্থীরা খাবার হিসেবে যে যার মত চর্বিযুক্ত মাংস প্রদান করেন। যার ফলে
কুমিরদুটোর পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেছে। বাচ্চা না ফোটার এটাও অনেক বড়
কারণ। তবে নতুন করে অল্প বয়সী দুটি নারী-পুরুষ কুমির দিঘীতে ছাড়তে পাড়লে
বাচ্চা ফোটানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সুলতানী
শাসন আমলে খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে হযরত খান জাহান আলী (রহ.)
বাগেরহাটে ‘খলিফতাবাদ’নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় তিনি ৩‘শ ৬০টি
দিঘী খনন করেন। এর মধ্যে সব থেকে বড় ‘ঠাকুর দিঘি’, স্থানীয়দের ধারণা এই
দিঘীর আয়তন ৩৬০ একর। যে দিঘীর পাড়ে তার সমাধী রয়েছে। এই দিঘীতে তিনি দুটো
মিঠাপানির প্রজাতির কুমির এনছিলেন। যাদের নামছিল ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’।
খানজাহান (রহ) এর মৃত্যুর পর মাজারের খাদেম ও ভক্তরা ওই কুমির দুটিকে
নিয়মিত খাবার দিতেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ওই কুমির যুগলের বংশ ধরেরা এখানে
বসবাস করে আসছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময় এই দিঘীর কুমির মারা যাওয়ার পরে মাত্র
দুটি কুমির ছিল।
এরই
মাঝে মাজারের দিঘীতে মিঠাপানির কুমিরের বংশবিস্তারের জন্য ২০০৫ সালে ভারতের
মাদ্রাজ থেকে ছয়টি কুমির এনে এখানে ছাড়া হয়। মাদ্রাজি কুমির হিংস্র
প্রকৃতির ছিল। তাদের মারামারির কারণে হযরত খানজাহান (রহ) এর আমলের একটি
কুমির ‘কালা পাহাড়’ অসুস্থ্য হয়ে পরে। ২০০৬ সালে কুমিরটি মারা যায়। সর্বশেষ
২০১৫ সালে অবশিষ্ট একটি কুমির ধলা পাহাড়‘র মৃত্যু হয়। এর মধ্য দিয়ে
খানজাহান আলী (রহ) এর আমলের কুমির যুগের সমাপ্তি ঘটে। এই সময়ে মাদ্রাজ থেকে
আনা ৬টি কুমিরের চারটি কুমির মারা যায়। বর্তমানে মাজার দিঘীতে দুইটি কুমির
রয়েছে। একটির নাম পিলপিল অপরটির নাম মাদ্রাজ।