কে এম, রাশেদ কামাল, মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
বেত দিয়ে হরেক রকম পণ্য তৈরি করেন মাদারীপুরের কারুশিল্পী মো: শাহ আলম আকন। তার তৈরি এসব হস্ত শিল্প পণ্য সামগ্রী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্রির পাশাপাশি বিদেশেও যাচ্ছে। প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ ধরনের হস্ত শিলপ পণ্য তৈরি করেন তিনি। তবে করোনা পরবর্তী কাঁচামাল সংকট এবং পূজি কমে যাওয়ায় তার উৎপাদন অনেকটাই কমে গেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের চর গোবিন্দপুর উত্তর কান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো: শাহ-আলম আকন। ছোট কাকা ওলিউর আকনের কাছ থেকে ১৯৯৩ সালে প্রথম এ কুটিরশিল্পে হাতে খড়ি তার। অল্প দিনেই শাহ-আলম রপ্ত করে নেন এ কারুশিল্পের কাজ। বর্তমানে তিনি একজন দক্ষ কারিগর। তার এ কারুশিল্পের মধ্যে রয়েছে খাট, দোলনা, পালকি, ওভাল গোল চেয়ার, স্কয়ার সোফা সেট, রকিং চেয়ার, নৌকা, মোরগ, মাইক, প্রজাপতি, আনারস, বাপুরাম সাপুরে, রিকশা, সাইকেল, ঘোড়া, কলমসহ কমপক্ষে ৫৫ থেকে ৬০ আইটেম। একটি জিনিস দেখা মাত্রই তিনি বেতের সাহায্যে অনায়াসেই তৈরি করে ফেলতে পারেন সে জিনিস। তার এ কাজে সাহায্য করেন তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা। বর্তমানে তাদের তৈরি নান্দনিক এ জিনিসপত্র চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, খুলনা, চট্টগ্রাম সহ বাহিরের দেশ কানাডা, সিংগাপুর, লন্ডনেও। নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, শরীয়তপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেত সংগ্রহ করেন তিনি। পরে নানা আকৃতিতে কাটা হয় সেই বেত। এসব কাটা বেত দিয়ে ধাপে ধাপে পেরেক আর বেতের সুতার সাহায্যে এসব জিনিস তৈরি করেন তিনি। বানানোর পরে করা হয় হালকা রঙের পালিশ। এখান থেকেই শাহ-আলম প্রতি মাসে আয় করেন ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা। আর এ আয় দিয়েই চলছে তার ৭ সদস্যের পরিবার।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: জুলহাস ভুইয়া (৫৫) বলেন, ‘এটা সুন্দর একটা কাজ, নিখুঁতভাবে তৈরি করতে হয়। তবে এ শিল্পটা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আমরা সবাই যদি তাকে উৎসাহ দেই এবং সহযোগিতা করি তবে শিল্পটা আবার জাগতে পারে।’
শরীয়তপুর থেকে তার এ হস্ত শিল্প দেখতে আসা মাহমুদুল ইসলাম মেহেদেী বলেন, ‘আসলে এ ধরনের শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। এগুলো কিন্তু আমাদের বাংলার ঐতিহ্য। আমরা যদি এসব শিল্প এবং শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে না পারি তাহলে আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখা যাবে না।। সরকারের উচিত এসব ক্ষেত্রে অনুদান দেয়া বা উৎসাহ মূলক কোন প্রণোদনা দেয়া যাতে এসব শিল্প আরো বিকশিত হতে পারে।’
শাহ-আলম আকনের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা (৩৫) বলেন, ‘আমার ঘরের সবাই এই কাজ করি। আমি পুরোপুরি শিখে গেছি। আমার বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সাথে এই কাজ করি। এই কাজ করতে আমার অনেক ভালো লাগে। গ্রামের মানুষেরা আসে, দেখে এবং প্রশংসা করে।’
কারুশিল্পী শাহ-আলম আকন বলেন, ‘১৯৯৩ সাল থেকে আমি এ কাজটির সঙ্গে আছি। কানাডা, সিংগাপুর, লন্ডন আমার হাতের তৈরি মালামাল যায়। করোনার আগে মালের চাহিদা বেশি ছিল। করোনর পরে মালের চাহিদা কমে গেছে। এখন চালানের অভাবে আমার কাজটা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সরকার থেকে আমাকে যদি একটা কারখানা তৈরি করে দেয় আর কিছু আর্থিক সাহায্য করে তাহলে এ শিল্পটাকে ধরে রাখতে পারবো।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি খোয়াজপুর ইউনিয়নের চর গোবিন্দপুর এলাকার শাহ-আলম আকন বেত ও বাঁশ দিয়ে চমৎকার সব জিনিস তৈরি করতে পারেন। আমাদের দেশে এখন এমন যোগ্য লোকের প্রয়োজন। তার সঙ্গে কথা বলে তাকে কীভাবে সাহায্য করা যায় এবং তার এ দক্ষতাকে কাজে লাগানো যায় আমরা সেই চেষ্টা করবো।’