শাহারুল ইসলাম ফারদিন, যশোর প্রতিনিধি:
জীর্ণ যাহা কিছু যাহা কিছু ক্ষীণ/নবীনের মাঝে হোক তা বিলিন/ধুয়ে যাক যত পুরনো মলিন/নব আলোকের স্নানে’। এমনই আশায় সকল জীর্ণতাকে ধুয়ে মুছে দিতে যশোরের বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে সকল ক্ষুদ্রতা-দীনতাকে ঢেকে দিয়ে পহেলা বৈশাখ বাঙালির জীবনে নতুন সুর ছড়িয়ে দেবে। নতুনের এই আলোকচ্ছটায় আবার নব সাজে সাজবে সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ।
আজ পহেলা বৈশাখ। আজ সূর্যের নতুন আলোর সঙ্গে এসেছে নতুন বছর। বঙ্গাব্দ ১৪২৯ স্বাগতম। ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো…মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’
করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ শেষে বাঙালির জীবনে আরো একবার এলো পহেলা বৈশাখ। গত বছর মানুষ ঘরে আবদ্ধ থাকলেও, এবছর বৈশাখ বরণে মেতে উঠেছে। সবার মনে পহেলা বৈশাখের সেই চিরায়ত গান গুঞ্জরিত হচ্ছে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মানুষ পথে নেমে এসেছে। ভোরের সকালে সঙ্গীতানুষ্ঠান, পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে বরণ করেছে নতুন বছরকে।
সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাতি যশোর। এই শহর থেকেই প্রথম শুরু হয় বৈশাখের প্রথম বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। যার ধারাবাহিকতা আজও বজায় রেখেছে সেই খ্যাতি।
গত ৪৮ বছর ধরে যশোরের পৌর উদ্যানে প্রভাতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে উদীচী জেলা সংসদ। এবছরও ৭টা ১মিনিটে পৌর উদ্যানে বৈশাখী আয়োজন শুরু হয়েছে। সংগঠনের ৩শ শিল্পীর সমন্বয়ে সাড়ে তিন ঘন্টার আয়োজনে পঞ্চ কবির গান, শিশুতোষ অনুষ্ঠান, আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশন হবে তবে সময় সল্পতার কারনে এবছর হলো না যাত্রাপালা।
দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার সূচনা হয় ১৯৮৫ সালে যশোরে। চারুপীঠের এই মঙ্গল শোভাযাত্রার সূতিকাগার। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবছরও বেশ জমাকালো শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে সংগঠনটি। বাঘ, ঘোড়া, হাতি, পাখি, রাজা, রানির শত মুখোশ বৃহত্তর তিনটি পুতুল নিয়ে চারুপীঠ চত্বর থেকে সকাল ৮ টায় প্রায় ২শ জনের সু সজ্জিত মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে।
তির্যক যশোরের আয়োজনে রয়েছে সকাল ৭টায় ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ প্রাঙ্গনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মঙ্গল শোভাযাত্রা।
হাতপাখা, মুখোশ,গরুর গাড়ি, পুতুল বানিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার অংশ নেয় সাংস্কৃতিক সংগঠন বিবর্তন যশোর।
মুসলিম একাডেমি মাঠে ৬টা ৩১মিনিটে পহেলার প্রথম প্রহর থেকে শুরু হয়। গান, নৃত্য, আবৃত্তি, শ্রুতি নাটকের মাধ্যমে দর্শক মুগ্ধ করে সাংস্কৃতিক সংগঠন পুনশ্চ যশোরের শিল্পীরা ।
সাম্প্রদায়ীকতার বিরুদ্ধে মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিশেষ আয়োজন ছিলো যশোরের নবগত সাংস্কৃতিক সংগঠন থিয়েটার ক্যানভাসের। চারুতীর্থের আয়জনে ছিলো সকাল ৭টায় রাখী বন্ধন, শোভাযাত্রা ও মিষ্টিমুখ । সুরবিতান সঙ্গীত একাডেমী ভোর সাড়ে ৬টায় মুন্সি মেহেরুল্লা ময়দানে (টাউনহল ময়দান) শতাব্দী বটমূলে আয়োজন করে।
সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি এবছর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদও বৈশাখ উদযাপন করেছে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় পূজা পরিষদের আওয়োজনে ছিলো ট্রাকে করে চড়কের দল, জয় ঢংক। শোভাযাত্রা শেষে বেলা ১১টায় হরিসভা মন্দিরে ছিলো দোল যাত্রা।
এছাড়াও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিলো জোটভুক্ত সকল সংগঠনের পরিবেশনা। সকাল নয়টায় টাউনহল মাঠ থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা সেখানে অংশ নেই যশোরের সকল সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন।