-এমএম জায়েদ ইবনে শহিদ, শিবচর, মাদারীপুর:
মাদারীপুর শিবচর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠে মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলের অপরূপ দৃশ্য। পুরো মাঠ যেন ঢেকে আছে সুন্দর এক হলুদের চাঁদরে। তাই এই সুযোগে মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি, দাঁড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময় তো নাই।’নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের এই মহান উক্তিটি কাজে লাগিয়ে মধু চাষীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে।
ফসলের জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌয়ালরা। ওই সব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।
জানা গেছে, চাষীরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রাণী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন মৌমাছি চাষীরা। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মৌ চাষের মাধ্যমে চাষীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব।
মৌচাষি কহিনুর জানান, তারা কয়েকজন মিলে শিবচর উপজেলার মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন। উপজেলার দ্বিতীয়খন্ড ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে ২৫০ টি মৌ বাক্স বসিয়েছেন তারা। এসব বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় সাড়ে ৭-৮ মণ মতো মধু পাওয়া যাচ্ছে। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।
আরেক মধু চাষী বলেন, আকার ভেদে একটি বাক্সে ২০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। এখানে মৌ চাষের বিশেষ বাক্স কলনি রয়েছে ৩০০ টি। প্রতিটি কলনিতে খরচ হয় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। আর প্রতি কেজি মধু বিক্রি করা হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় জানান, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ ভাগ বেড়ে যায়। তাই সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২শ ৫০ হেক্টর।
তিনি আরো বলেন, বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে এসব সরিষা ফুল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২ হাজার ৬শ ৩৬ টি মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে মৌমাছি ব্যবসায়ী যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।